শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৮

ছোট ব্যবসার ধারনা

খরগোশ পালন

খরগোস পালন ও ব্যবসায়িক দিক:






প্রতি চার থেকে ছয়টি মাদি খরগোসের জন্য একটি করে মাদা খরগোস দরকার। এ হিসেবে,,,,,,,


১) তিন মাস বয়সি  ২০০টি মাদি খরগোসের দাম-   ৬০,০০০ টাকা।
২)সে হিসেবে ৪০টি মাদা খরগোসের দাম- ১২,০০০টাকা।
৩) এদের  খাদ্যের জন্য ৪ মাসে খরচ -৪০০০★  ৪= ১৬,০০০টাকা।
৪)ঘর+ খাচা তৈরীর জন্য খরচ= ১৫,০০০টাকা।
৫) চিকিৎসা + অন্যান্য   খরচ= ১০,০০০ টাকা।
সুতরাং মোট খরচ= ১,১৩,০০০টাকা।





তাহলে ৪মাস পর বাচ্চা পাওয়া যাবে ৬০০ টি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৯০,০০০টাকা।
তাহলে বলা যায়, প্রতি মাসে খাদ্য ও অন্যান্য  খরচ বাদ দিয়ে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা টিকে।
এর বাজেট ইচ্ছে  মতো  বাড়া কমা করা যায়।







খরগোশ পালনের উপকারিতা

১. খরগোশ অধিক উৎপাদন ও দ্রুত বর্ধনশীল একটি প্রাণী।
২. খরগোশ প্রতিবার ২ থেকে ৮টি বাচ্চা দেয় এবং বছরে ৮ থেকে ১০ বার বাচ্চা দেয়।
৩. খরগোশের চামড়া দামি পোশাক তৈরিতে ব্যবহার  করা হয়।
৪. খরগোশ তৃণভোজী প্রাণী, অল্প পরিমাণ এবং নিম্নমানের খাদ্যেই এদের চাহিদা পূরণ হয়।
৫. খরগোশের মাংস খুব সুস্বাদু এবং মাংসে চর্বি ও কোলেস্টরলের মাত্রা কম।

বাজার সম্ভাবনা

খরগোশের মাংস সুস্বাদু হলেও আমাদের দেশে অতটা প্রচলিত নয়। তাই বাজারেও খুব বেশি পাওয়া যায় না। যেসব এলাকার লোকজন খরগোশের মাংস খায় ঐ সব এলাকার বাজারে বিক্রি করা যায়। এছাড়া অনেকে শখের বশে খরগোশ পালন করে।


খরগোশ পালন পদ্ধতি

বাসস্থান

১. ঘরের কোণে অল্প জায়গায় খাঁচায় খরগোশ পালন করতে হবে।
২. নিরিবিলি, পরিষ্কার-পরিছন্ন ও শান্ত পরিবেশে খরগোশ পালতে হবে।
৩. একটি বড় খাঁচায় ভাগ করে কয়েকটি খরগোশ রাখতে হবে।
৪. কয়েকটি স্ত্রী খরগোশ একসাথে রাখা যায়। তবে একাধিক প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ একসাথে রাখা ঠিক না কারণ এরা মারামারি করে।
৫. ৩ মাস বয়সের পর স্ত্রী ও পুরুষ খরগোশ একসাথে রাখা যাবে না।
৬. খরগোশের খাঁচা- বাঁশ, কাঠ ও তারের নেট দিয়ে তৈরি করতে হবে।

খাঁচা তৈরি

১. খাঁচা তৈরির জিনিসপত্র শক্ত টেকসই ও সহজে পরিষ্কার-পরিছন্নযোগ্য হতে হবে।
২. খাঁচা তৈরির জন্য স্থানীয় কমদামি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হবে।
৩. খাঁচা হালকা রাখতে হবে, যাতে সহজে বহন করা যায়।
৪. খাঁচায় খাবার ও পানি রাখার সুব্যবস্থা করতে হবে।
৫. খাঁচার ভিতর খরগোশ যেন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৬. খাঁচা থেকে খরগোশ যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

খাঁচার মাপ

খরগোশের ওজন যত কেজি হবে খাঁচার তলদেশও তত বর্গফুট হতে হবে। ৬টি খরগোশের জন্য খাঁচার মাপ নিম্নরূপ :

* কাঠামো (ফ্রেম) :
লম্বা ৯ হাতX ১/৫ হাত থেকে ২ হাত, মেঝে ১৬ কেজি তারের জাল ৯ হাতX ১/৫ হাত।

* দেয়াল :
পাতলা ও শক্ত কাঠের তক্তা দিয়ে করতে হবে।

* ছাদ :
তারের জাল দিয়ে তৈরি করতে হবে।
১. স্ত্রী খরগোশের খাঁচায় একটি ছোট নেট বক্স দিতে হবে। এবং এর মাপ হবে ১ফুটX১ফুট, উচ্চ ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি হবে।
২. বাক্সের একপাশ এবং উপরের অংশ খোলা রাখতে হবে।

খরগোশের খাবার

কচি ঘাস, লতা-পাতা, শস্য দানা, গাজর, মূলা, শশা, মিষ্টি আলু, খড়কুটো, তরকারির ফেলনা অংশ, গম, কুড়া, ভুসি, খৈল, সয়াবিন, দুধ, পাউরুটি, ছোলা ইত্যাদি খরগোশের খাবার। ঘাস, শাক ইত্যাদি সব সময় শুকনা বা ঝকঝকে অবস্থায় দিতে হবে। ভেজানো গম বা ছোলা অল্প সিদ্ধ করে দেয়া যেতে পারে। এর সাথে ভুসি মিশিয়ে দিলে আরো ভালো হয়।

একটি পূর্ণবয়স্ক খরগোশের খাদ্য তালিকা

খাদ্য উপকরণ
পরিমাণ (গ্রাম)
ভুট্টাদানা/গম ভাঙ্গা
৪৫.০
গমের ভুসি
৩৫.০
তিলের খৈল
১২.০
সয়াবিন
৭.১০
লবণ
০.৫০
ভিটামিন প্রিমিক্স
০.২৫
মিথিওনিন
০.১৫
               মোট=১০০ গ্রাম

* খরগোশের দৈনিক খাদ্য চাহিদা

খরগোশের ধরণ
আনুমানিক দৈহিক ওজন (কেজি)
দৈনিক খাদ্য গ্রহণ
দানাদার (গ্রাম)
সবুজ কচি ঘাস ও শাকসবজি (গ্রাম)
পুরুষ খরগোশ
৪-৫
১৭৫
২০০
স্ত্রী খরগোশ
৪-৫
১৫০
২০০
দুধদান স্ত্রী খরগোশ
৪-৫
২৫০
২৫০
দুধবিহীন স্ত্রী খরগোশ
৪-৫
১৫০
২০০
দুধ ছাড়ানো বাচ্চা (৬ সপ্তাহ)
০.৬-০.৭
৫০
১০০












খরগোশকে খাবার খাওয়ানোর নিয়ম

১. নতুন খরগোশ কিনলে খরগোশটি কি ধরণের খাবার খায় তা জেনে কেনার আগের ১/২ সপ্তাহ যে ধরণের খাবার খেয়েছে সে ধরণের খাবার দিতে হবে। পরে আস্তে আস্তে অন্য খাবারের অভ্যাস করতে হবে।
২. কম করে কিন্তু বারে বারে, কমপক্ষে দিনে ৩ বার খাবার দিতে হবে।
৩. পরিষ্কার ও তাজা খাবার দিতে হবে।
৪. আগের না খাওয়া খাবার সরিয়ে ফেলতে হবে।
৫. বিভিন্ন ধরণের খাদ্যে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
৬. শুকনা খাদ্য দিতে হবে।
৭. প্রতিদিন একই সময়ে খাবার দিতে হবে।
৮. হঠাৎ করে খাবার পরিবর্তন করা যাবে না।

প্রজনন

১. স্ত্রী ও পুরুষ খরগোশ আলাদা থাকবে।
২. প্রজননের সময় স্ত্রী খরগোশটিকে পুরুষ খরগোশের খাঁচায় ১০/১৫ মিনিট রাখতে হবে।
৩. গর্ভধারণ নিশ্চিত করার জন্য পরের দিন আবার একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
৪. বছরে ৫/৬ বার বাচ্চা নেয়ার হিসাব ধরে প্রজনন প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে। এতে বাচ্চা বড় ও সুস্থ হবে এবং মৃত্যুর হারও অনেক কমে যাবে।

প্রজননের জন্য খরগোশ নির্বাচন

১. সবচেয়ে বেশি ওজন বিশিষ্ট খরগোশ নির্বাচন করতে হবে।
২. কোন প্রকার অসুস্থ খরগোশকে প্রজনন করানো যাবে না।
৩. দুই থেকে তিন মাসের বিরতিতে মাদি খরগোশকে জন্মদান করানোর জন্য নির্বাচন করতে হবে।
৪. সাধারণত ৬/৭ টি মাদি খরগোশের জন্য ১টি পুরুষ খরগোশ ব্যবহার করা হয়।
৫. ১টি পুরুষ খরগোশকে সপ্তাহে ৩/৪ বারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

স্বাস্থ্য বিধি

১. বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য একটি ছোট নেস্ট বক্স অথবা কিছু পরিষ্কার খড়কুটা দিতে হবে।
২. বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য শান্ত ও পরিছন্ন পরিবেশের দরকার হয়।
৩. জন্মের পর কোন মরা বাচ্চা থাকলে তা সরিয়ে নিতে হবে।
৪. জন্মের পর ১ মাস মায়ের সাথে বাচ্চা থাকবে।
৫. ১ মাস পর মা থেকে আলাদা করে একসাথে রেখে আরও ২ মাস পালার পর খাওয়ার উপযুক্ত হবে।
৬. বাচ্চার গায়ে হাত দিয়ে আদর করা ঠিক না। কারণ এতে বাচ্চার শরীরে অন্য গন্ধ হয় এবং মা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে পারে।
৭. খরগোশের ঘর, খাঁচা, খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
৮. খাঁচা, নেস্ট বক্স পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে অনেকক্ষণ রোদে রাখতে হবে।
৯. পরিষ্কার খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে।
১০. পিঁপড়া, ইঁদুর, ছুঁচো, শিয়াল ইত্যাদির আক্রমণ থেকে খরগোশকে রক্ষা করতে হবে।

* খরগোশের সাধারণ রোগ-ব্যধি

রোগ
লক্ষণ
প্রতিষেধক ও চিকিৎসা
কক্রিডিওসিস
ডায়রিয়া, হঠাৎ মৃত্যু
সালফা মেথাজিন ও খাদ্যে কক্রিডিওস্ট্যাট
নিউমোনিয়া
খাদ্যে অরুচি, দেহে তাপ বৃদ্ধি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট
ঠান্ডা পরিহার ও এন্টিবায়োটিক
ক্রনিক রাইনাইটিস
হাঁচি দেয়া, দুই নাক হতে ক্ষরণ
এন্টিবায়োটিক
ম্যাস্টইটিস
ওলান গ্রন্থি গরম-লালচে এবং ফুলে যায়
উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও এন্টিবায়োটিক
দাদ রোগ
পশম পাতলা হয়, পশম পড়ে যায়
পরিষ্কার পরিছন্নতা, গ্লাইসোভিন ট্যাবলেট ২৫ মি.গ্রা.। প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য প্রতিদিন অক্সিটেট্রাসাইকিন ওয়েন্টমেন্ট

1 টি মন্তব্য: