শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮

সাইবার ক্যাফে ব্যবসা/ছোট ব্যবসার ধারনা/পার্ট-টাইম-ব্যবসা-ধারনা/idea box

সাইবার ক্যাফে  ব্যবসা

প্রতিদিন বিভিন্ন তথ্যের জন্য সাইবার ক্যাফেতে ভিড় লেগেই থাকে। সাইবার ক্যাফে ব্যবসা করে যে কোনো ব্যক্তি স্বাবলম্বী হতে পারেন। বাজারে রাস্তার মোড়ে সাইবার ক্যাফের দোকান স্থাপন করতে পারলে সবাই এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অফিস আদালতের আশপাশেও সাইবার ক্যাফে স্থাপন করা যেতে পারে। তবে স্থানটি অবশ্যই নিরাপদ হওয়া উচিত।
সাইবার ক্যাফে

Image result for সাইবার ক্যাফে 


পুঁজির পরিমাণ বেশি থাকলে সাইবার ক্যাফের ব্যবসা করে যেকোন বেকার যুবক স্বাবলম্বী হতে পারেন। বর্তমানে বিশ্বকে একটি গ্রাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ গ্রামের এক স্থান থেকে অন্য স্থানের খবরাখবর ও যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে যেমন-সংবাদপত্র, টেলিভিশন, টেলিফোন এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে এগুলোর সাথে নতুন আরেকটি মাধ্যম যোগ হয়েছে আর সেটা হচ্ছে “‍‍ ইন্টারনেট’’। যেকোন তথ্য জানা ও দ্রুত যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। সাইবার ক্যাফে এমন একটি দোকান যেখানে ইন্টারনেটের সংযোগসহ এক বা একাধিক কম্পিঊটার থাকে।


Image result for সাইবার ক্যাফে
বাজার সম্ভাবনা
  
বাংলাদেশ হচ্ছে একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে উন্নত বিশ্বের মত সবার ঘরে ঘরে কম্পিঊটার বা ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। তথ্য জানার বা যোগাযোগের জন্য মানুষকে সাইবার ক্যাফেমুখী হতে হয়। প্রতিদিন বিভিন্ন তথ্যের জন্য সাইবার ক্যাফেতে ভিড় লেগেই থাকে। সাইবার ক্যাফে ব্যবসা করে যে কোন ব্যক্তি স্বাবলম্বী হতে পারেন। বাজারে রাস্তার মোড়ে, যে সব স্থানে শিক্ষিত মানুষের চলাচল বেশি বা বসবাস করে এরকম স্থানের পাশে সাইবার ক্যাফের দোকান স্থাপন করতে পারলে সবাই এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অফিস আদালতের আশপাশেও সাইবার ক্যাফে স্থাপন করা যেতে পারে। তবে স্থানটি অবশ্যই নিরাপদ হওয়া উচিত।

মূলধন
আনুমানিক ৪৮০০০-৫০০০০ টাকা মূলধন নিয়ে সাইবার ক্যাফের ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। সাইবার ক্যাফে ব্যবসার জন্য নিজের কাছে যদি প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তাহলে স্থানীয় ঋণদানকারী ব্যাংক থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।

প্রশিক্ষণ 
সাইবার ক্যাফের পরিচালককে অবশ্যই কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। এছাড়া ইন্টারনেট সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হয়। তাই এ ব্যবসা শুরুর আগে ইন্টারনেট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলে ভালো হয়। ক্যাফে পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্য কোন ক্যাফে মালিকের কাছ থেকে ধারণা নেয়া যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
উপকরণ 
পরিমাণ 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
প্রাপ্তিস্থান 
কম্পিউটার
১টি
২৫,০০০
কম্পিউটার দোকান
মোডেম
১টি
৪,০০০
কম্পিউটার দোকান
ব্রডব্যান্ড (তার টেনে লাইন নিলে)

৬,০০০ (প্রতি মাসে)
কম্পিউটার দোকান
তার
৬০ মিটার
৭২০
কম্পিউটার দোকান
আই.এস.পি সংযোগ

২,০০০
কম্পিউটার দোকান
কম্পিউটার টেবিল
১টি
১,০০০
কাঠের দোকান
চেয়ার
৪টি
৩০০
কাঠের দোকান
লেজার প্রিন্টার
১টি
১০,০০০
কম্পিউটার দোকান
ইউ.পি.এস
১টি
২,৫০০
কম্পিউটার দোকান
স্ক্রুড্রাইভার, তার, প্লায়ার্স, টেস্টার
১ সেট
৫০০
হার্ডওয়ারের দোকান
মোট=৪৬,০২০ টাকা


সাইবার ক্যাফে চালানোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় 
সাইবার ক্যাফে পরিচালনার জন্য কতকগুলো বিষয় মাথায় রাখলে ভালো হয়, যেমনঃ-

  • প্রতি ঘণ্টা হিসেবে চার্জ নির্ধারণ  
সাইবার ক্যাফেতে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘন্টা হিসেবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। আবার কেউ আধঘন্টা বা তার কম সময় ব্যবহার করলেও সে অনুযায়ী টাকা নেওয়া হয়। প্রতি ঘন্টা কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য কত টাকা লাগবে তার একটি তালিকা করতে হবে।

  • অপব্যবহার রোধ করা 
ক্যাফেতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যেন ইন্টারনেটের কোন অপব্যবহার করতে না পারে সে জন্য পরিচালককে সচেতন থাকা উচিত।

  • ডেস্ক ভাগ করা
সাইবার ক্যাফেতে যদি বেশ কয়েকটি কম্পিউটার থাকে সেক্ষেত্রে পাশাপাশি দুজন বসে কাজ করলেও একজন যেন অন্যজনের বিরক্তির কারণ না হয় সেজন্য প্রত্যেকটি কম্পিউটারকে ছোট ছোট ডেস্কে আলাদা করে দেয়া যেতে পারে।

  • ব্যবহারকারীকে সাহায্য করা
সাইবার ক্যাফে আগত ব্যক্তিরা অনেক সময় ঠিকমত ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না, সেক্ষেত্রে তাদেরকে সাহায্য করতে হবে।

  • দোকান পরিছন্ন রাখা
সাইবার ক্যাফে দোকানটি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে; কারণ ধুলাবালি কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়া অপরিচ্ছন্ন থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও বিরক্ত হবেন।

  • ভালো ব্যবহার
যে কোন ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে ভালো ব্যবহার। ক্যাফে ব্যবহারকারীদের সাথে দোকান মালিকের ভালো ব্যবহার করা উচিত।

  • সাবধানতা  
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সাইবার ক্যাফের প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যবসা শুরু বা পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ব্যাপারে সচেতন থাকা ভালো । যেমন-
  1. প্রথমেই কম্পিউটার কেনার সময় সচেতন থাকতে হবে। এ সব যন্ত্রপাতি যেন নকল না হয় সেজন্য এ বিষয়ে অভিজ্ঞ লোককে সাথে নিয়ে ভালো মানের দোকান থেকে কম্পিউটার কেনা উচিত। কেউ চাইলে ঢাকায় কম্পিউটারের বাজার থেকেও কম্পিউটার কিনতে পারে।
  2. ক্যাফেতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যেন এর কোন অপব্যবহার না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
  3. অনেক সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাকীতে ইন্টারনেট সুবিধাভোগ করতে চায় সেক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। বাকীর কারণে ব্যবসার লোকসান হয় ।
  4. ক্যাশ বাক্সে বেশি টাকা রাখা উচিত নয়। টাকাগুলো নিরাপদ স্থানে বা ব্যাংকে রাখা যেতে পারে।
  5. দোকান ঘরে ভালো তালা লাগানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
  6. দোকানে আড্ডা জমতে দেয়া উচিৎ নয়, এতে ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে।

আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ

  • খরচ (প্রতি মাসে) 
স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ
১০-১৫ টাকা
ঘর ভাড়া + বিদ্যুৎ + ফোন বাবদ খরচ
৫৫০০-৬০০০ টাকা
মোট=৫৫১০-৬০১৫ টাকা 

  • আয় 
প্রতিদিন সাইবার ক্যাফের কম্পিউটারটি যদি ১১ ঘন্টা চলে এবং প্রতি ঘন্টায় আনুমানিক ৩০ টাকা হারে আয় হয়। তাহলে ১১ ঘন্টায় আয় হয় ৩৩০ টাকা।

১ দিনে আয়=৩৩০ টাকা
৩০ দিনে আয়=৯৯০০টাকা

  • লাভ 
৩০ দিনে আয়
৯৯০০ টাকা
৩০ দিনে খরচ
৫৫১০-৬০১৫ টাকা
লাভ=৪৩৯০-৩৮৮৫ টাকা 
তাহলে প্রতি মাসে একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে আনুমানিক ৩৮৮৫ থকে ৪৩৯০ টাকা লাভ হয়, তবে এর কম বা বেশি হতে পারে।


পুঁজির পরিমাণ বেশি থাকলে বা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে যেকোন ব্যক্তি সাইবার ক্যাফের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন