রবিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৮

সূর্যমুখী ফুলের চাষ/পার্ট-টাইম-ব্যবসা-ধারনা/idea box

সূর্যমুখী উৎকৃষ্ট তেল জাতীয় ফসল। সূর্যমুখীর বীজে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ উপকারী লিনোলিক এসিড রয়েছে এবং ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশের চাষীরা এর আবাদ শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলাগুলোতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সে. এর নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করতে হয়। খরিপ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়।
Image result for সূর্যমুখী ফুলের চাষ

জমি তৈরি: সূর্যমুখীর জমি গভীরভাবে চাষ দিতে হয়। জমি ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

জাত নির্বাচন: সূর্যমুখীর কিরণী (ডিএস-১) জাতটি সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভবন করা হয় এবং ১৯৮২ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছর উচ্চতা ৯০-১১০ সে.মি.। বীজ লম্বা ও চেপ্টা। এক হাজার বীজের ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। বীজের রঙ কালো। প্রতি গাছে একটি করে মাঝারি আকারের ফুল ধরে থাকে। বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ১.৩-১.৫ টন ফসল পাওয়া যায়। 
Image result for সূর্যমুখী ফুলের চাষ

বপন পদ্ধতি ও বীজের হার: সূর্যমুখীর বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সে.মি. রাখতে হয়। এভাবে বীজ বপন করলে হেক্টরপ্রতি ৮-১০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

সার প্রয়োগ: হেক্টর প্রতি ইউরিয়া ১৮০-২০০ কেজি,
হেক্টর প্রতি টিএসপি ১৫০-২০০ কেজি,
হেক্টর প্রতি এমপি ১২০-১৫০ কেজি,
হেক্টর প্রতি জিপসাম ১২০-১৭০,
হেক্টর প্রতি জিংক সালফেট ৮-১০ কেজি,
হেক্টর প্রতি বরিক এসিড ১০-১২ কেজি,
হেক্টর প্রতি ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৮০-১০০ কেজি।
ইউরিয়া সারের অর্ধেক এবং বাকি সব সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া দুই ভাগ করে প্রথম ভাগ চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৪০-৪৫ দিন পর বা ফুল ফোটার আগে প্রয়োগ করতে হবে।
Image result for সূর্যমুখী ফুলের চাষ

রোগবালাই ও প্রতিকার: আমাদের দেশে সূর্যমুখীর রোগের মধ্যে পাতা ঝলসানো রোগটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অলটারনারিয়া হেলিয়াস্থি নামক ছত্রাকের আক্রমণে সূর্যমুখীর এ রোগটি হয়ে থাকে। প্রথমে পাতায় ধূসর বা গাঢ় বাদামি বর্ণের অসম আকৃতির দাগ পড়ে। পরে দাগ মিশে গিয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। অবশেষে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়।
Image result for সূর্যমুখী ফুলের চাষ

এছাড়াও সূর্যমূখীর আকেটি রোগ হল শেকড় পচা রোগ। সাধারণত স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান- গাছের গোড়া সাদা তুলার মত ছত্রাকের মাইসেলিয়াম এবং গোলাকার দানার মত স্কেলেরোশিয়াম দেখা যায়। প্রথমে গাছ কিছুটা নেতিয়ে পড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে সমস্ত গাছ ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়।

প্রতিকারের জন্য রোগ সহনশীল কিরণী জাত চাষ করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল-৫০ ডবি্লউ পি (২% হারে) পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কমে যায়। ফসল কাটার পর গাছের পরিত্যক্ত অংশ নষ্ট করলে বা পুড়িয়ে ফেললে এ রোগের উৎস নষ্ট হয়ে যায়।

সূর্যমুখীর শিকড় পচা রোগের প্রতিকার হিসেবে ভিটাভেক্স-২০০ এর সাহায্যে মাঠ শোধনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার রোধ করা যায়। সাধারণত জমি পানি সিক্ত থাকলে এ ছত্রাক বাঁচতে পারে না। সুতরাং রোগ আক্রমণের পর জমিতে প্লাবন সেচ দিয়ে প্রকোপ কমানো যায়। পর্যায়ক্রমিকভাবে ফসলের চাষ করলে উপযুক্ত পোষক গাছের অভাবে পূর্ববর্তী আক্রমণকারী রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।
বপন থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিন লাগে ফসল সংগ্রহ করতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন