যে কারণে তুমি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হতে পার!
এটা পারফেক্ট বিষয় হতে পারে। ব্যবসায় শিক্ষা যদি তোমার ভাল না লাগে তবে এই ১০টি কারণকে তুমি মন্দের ভালও বলতে পারো।
১। বিষয়টা সৃজনশীল
ব্যবসায় শিক্ষা কাঠখোট্টা নয় বরং খুবই ইন্টারেস্টিং একটা বিভাগ। তাত্ত্বিক বিষয়গুলো পড়লেই দেখবে যে বিষয়গুলো তেমন একঘেয়ে নয়। অনেকেই মনে করে, “ব্যবসায় শিক্ষা! শুধু মুখস্থের ব্যাপার”। কিন্তু বাস্তবে এখানে ভাল করার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে মুখস্থ না করে বুঝে বুঝে পড়া। কারণ মুখস্থ করলে কখনোই তুমি ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ভাল ফল আশা করতে পারবেনা। আর হিসাববিজ্ঞানটা মন দিয়ে একটু চর্চা করলেই আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে, এই বিষয়টাই একদিন তোমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হয়ে উঠবে!
২। এগিয়ে যাবে এক্সট্রা-কারিকুলারে
তুমি যদি অনেক মনোযোগ দিয়ে পড় তাহলে দেখবে যে পরীক্ষার অনেক আগেই তোমার পড়া সব শেষ। অথচ তখনো অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক খাতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে। তো, এই স্পেয়ার টাইমটায় তুমি কি করতে পারো? হাতে তুলে নাও তোমার গিটারটা আর করে ফেলো কোনো জনপ্রিয় গানের কভার। কিংবা পড়ে ফেলো একটা ফাটাফাটি উপন্যাস! আর চাইলে তুমি কিন্তু তোমার পড়া জিনিষগুলোই আরেকবার রিভাইস করে ফেলতে পারো।
৩। বিষয়গুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত
ব্যবসায় শিক্ষার একটা বিষয়ের সাথে অন্য বিষয়ের অনেক মিল পাওয়া যায়। যেমন ধরো, হিসাববিজ্ঞান ও ফিন্যান্স; এমন প্রতিটা বিষয়ই পড়তে গেলে দেখবে অন্য বিষয়ের সাথে কিছু মিল পাওয়া যাচ্ছে।
৪। বিষয়গুলো নতুন এবং মজার
এর আগে যে বিষয়গুলো পড়েছো সেগুলো আর ভাল লাগছেনা? নতুন কিছু নিয়ে পড়তে চাও? তাহলে ব্যবসায় শিক্ষা শাখাই তোমাকে সাহায্যের হাত বাড়াবে কারণ আমি হলফ করে বলতে পারি যে এখানে তুমি এমন কিছুই পাবে না যা আগের ক্লাসগুলোতে পড়ে এসেছো।
৫। সহজ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা
সত্যি বলতে কি, বিজ্ঞান বিভাগের তুলনায় আমার লেখাপড়ার সেক্টর খু-উ-ব কম কিন্তু প্রতিযোগীতা অনেক বেশি। আর তার থেকেও কম হচ্ছে ভার্সিটিতে আমাদের সিটের সংখ্যা কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে একেকটা সেক্টরের জন্য একেকভাবে প্রস্ততি নিতে হয় যেটা আমাদেরও নিতে হয় তবে, ইংরেজী, বাংলা, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স/মার্কেটিং, হিসাববিজ্ঞান, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান যদি তুমি ভালমত পড় তবে তুমি একটা কমপ্লিট ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে পারবে।
৬। দ্রুত সফল হওয়া সম্ভব
ব্যবসায় শিক্ষা শাখার সবচেয়ে ভাল দিক কোনটা জানো? তোমার স্কিল ভাল থাকলে গ্র্যাজুয়েশনের আগে কিংবা সাথে সাথে তোমার হাতে জব থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না! সেই হিসেবে, তুমি যদি ছেলে হও তবে বেলার বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেই তাকে বলতে পারবে, “চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো?” আর মেয়ে হলে ৬ ফিট পাত্রের সমান হওয়ার জন্য তোমাকে ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী মাখতে হবেনা।
৭। প্রতিটা বিষয়ই ডিমান্ডেবল!
ভার্সিটিতে ভর্তির সময় কোনো বিষয় নিয়েই তোমার ভাবতে হবেনা যে, “অমুক সাব্জেক্ট তো পেলাম, ভবিষ্যতে যে কি আছে?!” শুধু চোখ বন্ধ করে ভর্তি হয়ে যাবে কারণ প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্যই আলাদা আলাদা সম্মানজনক জব সেক্টর আছে। এমনকি এই বিষয়গুলো নিয়ে ভালভাবে পড়াশুনা করলে তোমার বিসিএস নিয়েও টেনশন করতে হবে না কারণ তুমি এমনিতেই অনেক ভাল একটা ভবিষ্যৎ পেতে যাচ্ছো।
৮। অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমায়
ব্যবসায় শিক্ষা তোমার অনেক রকমের স্কিল ডেভেলপ করতে সাহায্য করবে। ব্যবসায়ের, ব্যবস্থাপনার, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির অনেক কৌশল শেখাবে যা ভালভাবে রপ্ত করতে পারলে তোমার চাকরীর পেছনে ছুটতে হবেনা বরং তুমি নিজের এবং তোমার মত অনেকের আয়ের ব্যবস্থা নিজেই করে ফেলতে পারবে।
৯। যোগাযোগমূলক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক দক্ষতার উন্নয়ন
এই বিভাগে তুমি যেই বিষয়েই পড় না কেনো, তোমাকে অনেক রকমের প্রেজেন্টেশন, রিপোর্ট রেডি করতে হবে যার দ্বারা তোমার আউটার নলেজ বৃদ্ধি পাবে এবং তুমি যেকোনো কিছুই সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারবে। বিবিএ করার সময় তুমি অনেক রকমের বিজনেস রিলেটেড ক্লাবে জয়েন করার সুযোগ পাবে যেখানে তুমি অনেক স্কিল্ড মানুষদের সাথে চলাফেরার সুযোগ পাবে, অনেক ধরণের কাজ করার সুযোগ পাবে।
১০। দেশের স্বার্থে
একটা দেশের উন্নয়নে বিজ্ঞানের প্রয়োজন আমরা সবাই জানি কিন্তু দেশটার আর্থিক উন্নয়নে ব্যবসায়, বাণিজ্য, ব্যাংকিং ও বীমা কী পরিমাণ অবদান রাখে সেটা তুমি চিন্তাও করতে পারবে না। এসব জিনিষ ছাড়া বাংলাদেশ কখনোই আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী হতে পারবে না আর অর্থনৈতিক উন্নতি না আসলে এই দেশে কোনো রকমের বৈজ্ঞানিক গবেষনা হবে না।
কিন্ত সমস্যা হচ্ছে, পশ্চিমে এমনকি পাশের দেশ ভারতেও ব্যবসায় শিক্ষা অনেক সমাদৃত হলেও বাংলাদেশে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এবং তাদের মা-বাবা বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি বেশি আগ্রহী ফলশ্রুতিতে, ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরিধিটা এখানে আশানুরূপভাবে বাড়ছে না। তাই বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যত বেশি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় আসবে তত বেশি এই শাখার এবং আল্টিমেটলি দেশের উন্নতি হবে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন