শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮

ছোট আকারে খাবারের দোকান বা হোটেল/ছোট ব্যবসার ধারনা/পার্ট-টাইম-ব্যবসা-ধারনা/idea box

ছোট আকারে খাবারের দোকান বা হোটেল



Image result for বাজারে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা strete food
হোটেল বা খাবারের দোকান এমন স্থান যেখানে টাকার বিনিময়ে খাবার পাওয়া যায়। ঘরের বাইরে থাকলে, ভ্রমণকালে, অফিস থেকে বাসা দূরে হলে এবং সময় বাঁচাতে হলে অল্প খরচে পরিচ্ছন্ন ও পুষ্টিকর খাবার নিদির্ষ্ট সময়ে নিয়মিত হাতের কাছে পাওয়াটা কঠিন ব্যাপার। হোটেল বা খাবারের দোকান এই সমস্যার সমাধান করে দেয়।

খাবারের দোকান বা হোটেল

Image result for চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ব্যবসাImage result for  রেস্টুরেন্ট ব্যবসা



হোটেল বা খাবারের দোকান এমন স্থান যেখানে টাকার বিনিময়ে খাবার পাওয়া যায়। ঘরের বাইরে থাকলে, ভ্রমণকালে, অফিস থেকে বাসা দূরে হলে এবং সময় বাঁচাতে হলে অল্প খরচে পরিচ্ছন্ন ও পুষ্টিকর খাবার নিদির্ষ্ট সময়ে নিয়মিত হাতে কাছে পাওয়াটা কঠিন ব্যাপার। হোটেল বা খাবারের দোকান এই সমস্যার সমাধান করে 

বাজার সম্ভাবনা  
কাজের প্রয়োজনে অনেক সময় মানুষকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। তাই খাওয়ার প্রয়োজনে মানুষ খাবারের দোকানে খেতে যায়। এছাড়া অফিস আদালতে কর্মজীবী মানুষ অনেক সময় তাদের দুপুরের খাবার ও বিকালের নাস্তা হোটেল খেয়ে থাকে। অনেকে আবার স্বাদ পরিবর্তনের জন্যও খাবারের দোকানে খেতে যায়।

স্থান নির্বাচন  
সাধারণত শহরের কেন্দ্রে বা বাজারে, মূলত যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেখানে হোটেল গড়ে তোলা লাভজনক। এছাড়া রাস্তার ধারেও হোটেল গড়ে ওঠে। আসলে হোটেল গড়ে তোলার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সেটা এমন স্থানে হয় যাতে মানুষ সেখানে সহজেই আসতে পারে এবং তার কাজের জায়গায় অল্প সময়ে যেতে পারে। মহাসড়কের পাশে, সিনেমা হলের পাশে, বড় ঘাটের, ফেরিঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, বিমান বন্দরের আশেপাশে এবং অফিস আদালতের আশেপাশে হোটেল ব্যবসা ভালো চলে।

Image result for বাজারে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা strete food 
মূলধন 
ছোট আকারে হোটেল বা খাবারের দোকান দেওয়ার জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে আনুমানিক ৭০০০ থেকে ৮০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রতিদিন বাজার করার জন্য ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়া খাবারের দোকানের জন্য স্থায়ী দোকানের প্রয়োজন হয়। তাই দোকান ঘর ভাড়া নেওয়ার জন্য বাড়তি কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়-স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) -এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

প্রশিক্ষণ
খাবারের দোকান দেয়ার আগে এ ব্যবসায় অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে ব্যবসার বিস্তারিত জেনে নিলে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে। কোন হোটেলে সহকারী হিসেবে কাজ করে পরে নিজেই হোটেল ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। এছাড়া রান্না জানলে বা রান্না সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকলে ভালো হয়।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
  • স্থায়ী উপকরণ 
উপকরণ 
পরিমাণ 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
প্রাপ্তিস্থান 
হাড়ি/পাতিল
৫টি
৫০০-৫৫০
তৈজসপত্রের দোকান
কড়াই
২টি
৩০০-৩৫০
তৈজসপত্রের দোকান
গামলা
২টি
১০০-১২০
তৈজসপত্রের দোকান
চামচ
৩টি
১৫০-১৮০ 
তৈজসপত্রের দোকান
ঢাকনা
৩টি
১৫০-১৬০
তৈজসপত্রের দোকান
বালতি
২টি
১২০-১৩০
তৈজসপত্রের দোকান
বটি
২টি
২০০-২২০
তৈজসপত্রের দোকান
ছুরি
২টি
১০০-১২০
তৈজসপত্রের দোকান
চুলা
২টি
২০০-২২০
তৈজসপত্রের দোকান
প্লেট
২৪টি
৮০০-১০০০
তৈজসপত্রের দোকান
গ্লাস
২৪টি
১৮০-২০০
তৈজসপত্রের দোকান
চামচ
২৪টি
১০০-১২০
তৈজসপত্রের দোকান
জগ
৩টি
১২০-১৫০
তৈজসপত্রের দোকান
কাপ-পিরিচ
২৪টি
৭০০-৮০০
তৈজসপত্রের দোকান
বাটি (বড়)
৬টি
৩০০-৩২০
তৈজসপত্রের দোকান
ভাতের ডিশ
৪টি
৩২০-৩৪০
তৈজসপত্রের দোকান
চেয়ার
২৪টি
১৫০০-১৬০০
আসবাসপত্রের দোকান
টেবিল
৬টি
১৫০০-১৬০০
আসবাসপত্রের দোকান
                                   মোট =৭৩৪০-৮১৮০ টাকা 


  • কাঁচামাল 
প্রতিদিনের খাবারের রান্নার জন্য চাল,ডাল, তেল শাক-সবজি, ডিম, বা চা পাতা, মাংস, মাছ ইত্যাদি কেনার জন্য ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯ 

হোটেলের খাবার ব্যবস্থা 

সাধারণত সব হোটেলে পাঁচ বেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকে। সকালের নাস্তা, ১০-১১ টার সময় হালকা খাবার, দুপুরের খাবার, বিকালে নাস্তা ও রাতের খাবার।
যিনি হোটেল পরিচালনা করবেন তাকে প্রতিদিনের প্রতিবেলার খাবারের একটা তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। যেমন-
  1. সকালের নাস্তা  হিসেবে রুটি, পরোটা, সবজি, ডাল, মাংস, ডিম, রাখা যেতে পারে। সঙ্গে চা থাকলে ভালো হয়।
  2. ১০-১১ টার দিকে চা এর পাশাপাশি সিঙ্গারা, সমুচা, বিস্কুট, ইত্যাদি খাবার রাখা যেতে পারে।
  3. দুপুরে ভাতের সাথে ডাল, মাছ, মাংস, সবজি, ডিম ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।
  4. বিকালে নাস্তা  হিসেবে চা, মিষ্টি, সমুচা, জিলাপি, সিঙ্গারা প্রভৃতির আয়োজন করা যেতে পারে।
  5. দুপুরের মতো রাতের খাবারের তালিকাও ঠিক করতে হয়। যেমন ভাতের সাথে ডাল, মাছ, মাংস, সবজি ইত্যাদি।
ক্রেতারা যাতে তাদের সাধ্য ও পছন্দ অনুযায়ী খাবার কিনে খেতে পারে সেজন্য মাছ, মাংস, ডিমের পাশাপাশি শাক, সবজি, ডাল ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখতে হবে।


হোটেল পরিচালনার নিয়ম কানুন

যে কোন ব্যবসা পরিচালনার জন্য কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। হোটেল ব্যবসার জন্য বেশ কিছু নিয়ম-কানুন পালন করতে হয় যেমন-
  1. হোটেল ব্যবসায়ীকে প্রথমেই খাবারের মূল্যসহ একটা তালিকা তৈরি করতে হবে যাতে ক্রেতারা এসে খাবারের দাম দেখে তাদের সাধ্য অনুযায়ী খাবার অর্ডার করতে পারে।
  2. হোটেলে সব সময় ভালো জিনিস রাখতে হবে। ক্রেতাদের কাছে কখনও খারাপ জিনিস বিক্রি করা উচিত হবে না। টাটকা মাছ, মাংস, শাকসবজি রান্না করতে হবে। ভালো মানের মসলা ব্যবহার করতে হবে।
  3. ক্রেতার সাথে ভালো ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো ব্যবহার পেলে ক্রেতারা একই দোকানে বার বার খেতে আসবে।
  4. খাবার দোকান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে যেন হোটেলের আশপাশে স্যাঁত স্যাঁতে না হয়। চেয়ার টেবিল, গ্লাস, প্লেট, চামচ পরিস্কার রাখতে হবে। দোকানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। একজনের খাবার পর প্লেট গ্লাস ভালো করে পরিস্কার গরম পানি ও গুঁড়া সাবান দিয়ে ধুতে হবে। টেবিল পরিস্কার করে রাখতে হবে।
  5. হোটেলে যেসব জিনিসপত্র আছে তার একটা তালিকা রাখলে ভালো। তালিকা থাকলে সপ্তাহের শেষে কেনাকাটা করতে সুবিধা হবে। তাছাড়া দোকানের জিনিসপত্রের হিসাব রাখতেও সুবিধা হবে।
  6. হোটেল থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাবার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। অনেকে হোটেলে না খেয়ে খাবার কিনে নিয়ে যেতে চায়। সেক্ষেত্রে খাবার সরবরাহের জন্য পরিস্কার কাগজের প্যাকেট বা বক্স রাখতে হবে।
সাবধানতা
  • হোটেলের সর্বত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • পরিস্কার প্লেট, গ্লাস, চামচ, পরিবেশন করতে হবে।
  • বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে।

আয় ও লাভের হিসাব 
পাবনার একজন হোটেল ব্যবসায়ীর হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন আনুমানিক ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ করা যাবে। সে হিসেবে এক সপ্তাহে ২৪৫০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা লাভ করা সম্ভব।  
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯ 

এই ব্যবসায় একটু বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয়। তাই কিছু টাকা সংগ্রহ করে বা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যাবে। ক্রেতাদের  সাথে ভাল ব্যবহার করলে ও ভাল মানের খাবার সরবরাহ করলে সহজেই সুনাম ছড়িয়ে পড়বে এবং ভাল আয় রোজগার হবে।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : খাবারের দোকান বা হোটেল ব্যবসা শুরু করা জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে কত টাকার প্রয়োজন হবে ?
উত্তর : স্থায়ী উপকরণ কিনতে আনুমানিক ৭৩৪০-৮১৮০ টাকার প্রয়োজন হবে।
প্রশ্ন ২ :  খাবারের দোকান ব্যবসায় কত টাকা লাভ হয় ?
উত্তর : খাবারের দোকান ব্যবসায় প্রতিদিন আনুমানিক ৩৫০-৪০০ টাকা লাভ করা যায়।
প্রশ্ন ৩ : ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে কি করতে হবে ? 
উত্তর : ঋণের প্রয়োজন হলে ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

1 টি মন্তব্য: